প্রযুক্তিও কেন নারীর প্রতি সহিংসতার হাতিয়ার হবে
প্রযুক্তিও কেন নারীর প্রতি সহিংসতার হাতিয়ার হবে, জনাব যখনই স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে শপিং বা আউটিং-এ বের হন, তিনি নিজেই ট্রায়াল রুমে বা হোটেল রুমে প্রবেশ করেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
জনাব যখনই স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে শপিং বা আউটিং-এ বের হন, তিনি নিজেই ট্রায়াল রুমে বা হোটেল রুমে প্রবেশ করেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। এই 'ঠিক আছে' ব্যাপারটা আনিসুর জন্য একটা বড় চিন্তার বিষয়। কারণ স্ত্রী-সন্তানরা যেন গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবির শিকার না হয়।
যদিও যুগে যুগে হয়রানি ও নির্যাতনের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে, তবে শিকারের ক্ষেত্রে নারীরা বরাবরই শীর্ষে। নারী পণ্য, নারী নির্যাতনের হাতিয়ার। কাউকে ফাঁসানো হোক বা কারো ক্ষতি করা হোক, একজন নারীকে খুঁজে বের করা এবং হয়রানি করাই প্রথম 'সমাজের' মাথায় আসে।
প্রযুক্তির যুগে নারীর প্রতি সহিংসতা নতুন রূপ নিয়েছে। অপরাধীরা গোপনে ছবি তোলা, সম্পর্কের অবনতির সময় অন্তরঙ্গ ছবি ছড়ানো, মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত ছবি তোলা বা ছবি এডিট করে নারীদের হেয় করার নানা উপায় খুঁজে নিচ্ছে।
গোপনে ভিডিও টেপিং, ট্রিক ফটোগ্রাফি, অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার মতো বেশ কিছু ঘটনা সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে।
.
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র তার স্ত্রীকে নিয়ে রাজশাহী নগরীতে চিকিসা নিতে এসে হোটেলে অবস্থান করেন। হোটেলে ঢোকার এক ঘণ্টা পর হোটেলের লোকজন ওই দম্পতিকে বাইরে ডেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বলা হয়, টাকা না দিলে গোপনে রেকর্ড করা ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পুলিশ জানায়, হোটেলের বিভিন্ন কক্ষের দরজায় খোঁচা দিয়ে কয়েকজন অতিথি হোটেলে এলে গোপনে ভিডিও করা হয়।
এই ঘটনার পরপরই আরও একটি কীর্তি জানা গেল। অনলাইনে অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি করার সময় গাজীপুরের এক ডেলিভারিম্যান নারীদের ছবি তুলতেন। পণ্য ডেলিভারির পর ওই নারী গ্রাহকের মোবাইল ফোন চাইতেন এবং গুগল ফটো অ্যাপে গিয়ে বলতেন পণ্য সহজে ডেলিভারির জন্য গুগল লোকেশন যোগ করা হবে। এই অ্যাপের শেয়ারিং অপশনে যান এবং 'পার্টনারের সাথে শেয়ার করুন' বিভাগে আপনার ব্যক্তিগত জিমেইল অ্যাকাউন্ট যোগ করুন। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
ছেলেরা প্রায়শই পাবলিক প্লেসে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের কত ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে? মেয়েরা যখন ঠিক একই কাজ করে তখন এটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেম বা সম্পর্কে ব্যর্থ হওয়ার পর অনলাইনে পার্টনারদের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা এখন সাধারণ ব্যাপার। বলিউডের বিগ বস তারকা রাখি সাওয়ান্ত সম্প্রতি তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন
স্বামী মুহূর্তের ভিডিও বানিয়ে বিক্রি করে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা বলেছেন, অনেক পুরুষ মনে করেন নারীকে হেয় করার মানসিকতা তাদের পুরুষত্ব প্রমাণের উপায়। তিনি প্রথম আলো</em>কে বলেন, নারীরা আগের চেয়ে বেশি বের হচ্ছে, সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের আনাগোনা বেড়েছে। তাদের এখন পাবলিক প্লেসে অনেকটা হাঁটতে হয়। কিন্তু অনেক পুরুষ তা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। সুযোগ পেলেই তারা মারধর করে।
অধ্যাপক শাহনাজ বলেন, অনেকেই নারীদের হয়রানি করে বা তাদের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পরিচিতদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেতে চায়।
তারা এটাকে 'পুরুষত্বের' লক্ষণ মনে করে। তিনি আরও বলেন, এসবের ভয়ে মেয়েদের চলাচলে বাধা দেওয়া যায় না; বরং নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করছেন, আশপাশে অনেক হোটেল তৈরি হচ্ছে। এসব হোটেলকে তদারকির আওতায় আনা দরকার। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে গোপনে ভিডিও বা ছবি রেকর্ড করার অভিযোগ থাকলে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের জরিমানাও করতে হবে। তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বিষয়ে কঠোর হবে।
সম্প্রতি একটি অফিসে যোগ দিয়েছেন ফারিয়া আহমেদ। যতবার অফিসের টয়লেট ব্যবহার করেন, ততবার তিনি ভাবেন, কোথাও কিছু আছে কি? ফারিয়া বলেন, ট্রায়াল রুমে বা বাইরে টয়লেট ব্যবহার করলে অবচেতন মনে একটা ভয় কাজ করে। কিন্তু কী করব? আমাদের চলতে হবে।'
সর্বদা পাবলিক প্লেসে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে অসুবিধার কথা উল্লেখ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, নারীরা কেন সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াতে হবে?
প্রযুক্তি অনেক এগিয়েছে জানিয়ে সুমন আহমেদ বলেন, এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা কঠিন। এসব ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘটনা ঘটলে ভিকটিমকে আড়াল না করে ব্যবস্থা নিতে উসাহিত করতে হবে। তাহলে অন্যরাও সাবধান হবে।