শুধু তোমারই জন্যে
নীল আমি জানি এটা তুই, চোখের ওপর থেকে হাত সোড়া" নূপুর ওর চোখের ওপর থাকা হাত দুটো স্পর্শ করেই বুঝে নেওয়াই নির্ঝর বিরক্ত ভাব নিয়ে হাত দুটো সরিয়ে বলে
শুধু তোমারই জন্যে"
পর্ব:-১৮
"নীল আমি জানি এটা তুই, চোখের ওপর থেকে হাত সোড়া" নূপুর ওর চোখের ওপর থাকা হাত দুটো স্পর্শ করেই বুঝে নেওয়াই নির্ঝর বিরক্ত ভাব নিয়ে হাত দুটো সরিয়ে বলে "উফ ভাবলাম বুঝতে পারবি না, ঠিক চিনে ফেললি"।
"আমি তোর স্পর্শ চিনব না পাগল এটা কোনোদিন হতে পারে" নূপুর নির্ঝর কে পাওয়ার পর এতটাই ওর সাথে বকবক করতে মেতে ওঠে যে রিধিশ ওর পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁসছে সেটা লক্ষ্য করেনি।
নির্ঝর রিধিশকে লক্ষ্য করে ওর দিকে তাকিয়েই নূপুরকে বলে "উনি কে সোনাই"? নূপুর রিধিশের পরিচয় দিলে রিধিশ নির্ঝর এর পরিচয় জানতে চাইলে নূপুর বলার আগেই নির্ঝর হাত বাড়িয়ে বলে "হেলো! আমি নির্ঝর, সোনাই এর বেস্ট ফ্রেন্ড। যখন সোনাই নাকে সর্দি নিয়ে ঘুরতো তখন থেকে আমরা বন্ধু"। নূপুর ওখানেই নীলকে পেটাতে লাগে দুজনে খুনসুটি করতে লাগে। নির্ঝর বলে ওঠে "আমরা কি সব মারপিট, সব গল্প এখানেই করবো ম্যাডাম"? নূপুর নির্ঝরের হাত ধরে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে "আরে তোকে এতদিন পর দেখে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছি, চল চল বাড়িতে গিয়ে জমিয়ে আড্ডা হবে। আপনিও আসুন"। রিধিশও মাথা নড়িয়ে গাড়িতে চাপে।
নূপুর আর নির্ঝরের একে অপরকে পরিচিত নামে না ডেকে আদর করে সোনাই, নীল এমন নামে ডাকা; দুজনের খুনসুটি; নূপুরের নীলের কাছে ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলা এগুলো খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না রিধিশের। গাড়িতে বসেও দুজনে সমানে দুষ্টুমি করে চলেছে দেখে মনে হচ্ছে দুটো বাচ্চা। ওদের দেখে বোঝাই যাচ্ছে একে অপরের প্রতি দুজনের কতটা গভীর ভালোবাসা। রিধিশ লুকিং গ্লাস এ সবটা লক্ষ্য করছে আর নিজের অজান্তেই বুকের বাম পাশে তীব্র ব্যাথা অনুভব করছে।
সেদিন আর নূপুর অফিস যায়না। রিধিশকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে নির্ঝরকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। রিধিশ অফিসে গিয়ে নিজের কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। ওর মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে "ম্যাডাম বন্ধুকে আনতে আমায় কেনো নিয়ে গেলেন"? পরক্ষণেই ভাবে সব জায়গায় তো আমি ম্যাডাম এর সাথে যায় তাই হইতো। ওদের নিয়ে নানান কথা না ভাবতে চাইলেও ভেবে ফেলছে। যতবারই এসব ভাবনা বাদ দিয়ে কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করছে আরো বেশি করে যেনো নূপুরকে মিস করছে। এই প্রথমবার বোধয় রিধিশ নূপুরকে মিস করতে শুরু করেছে। রিধিশের অন্যমনস্কতা বাকিদের চোখ এড়ালেও অফিসে যে ওকে একটু হলেও বোঝে সেই রাজ রিধিশের কাছে গিয়ে বলে "কি রিধিশ ভাই চিন্তিত মনে হচ্ছে! এনি প্রবলেম"? রিধিশ মাথা নড়িয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে "না না সব ঠিক আছে"। রাজ ভ্রু কুঁচকে বলে "কিন্তু আমার কেমন যেনো আজ অন্যমনস্ক লাগছে তোমাকে"! রিধিশ আবারো মিথ্যে হেসে সোজা ভাবে বসে জানিয়ে দেই সে ঠিক আছে।
হিয়া ওদের গল্প করতে দেখে ওদের কাছে এসে বলে "এই তোমরা কি এত গল্প করছ আমাকেও একটু বলো"? রাজ বিরক্ত নিয়ে ফিসফিস করে রিধিশের কানের কাছে এসে বলে "চলে এলেন, এর জন্য দুটো কথা বলেও শান্তি নেই"। রিধিশ কম্পিউটার স্ক্রীনে মুখ ডুবিয়ে এমন ভাব করে যেনো আসে পাশে কি হচ্ছে ও কিছুই জানে না। রাজ বুঝতে পরে হিয়াকে ইগনোর করতেই রিধিশ এমন করলো তাই আর কথা না বাড়িয়ে নিজের জায়গায় চলে যায়। হিয়া আর উপায় না পেয়ে চলে গেলো।
রিধিশ বাড়ি ফিরে অন্য দিনের মতো সন্ধ্যে আর বেরোই না। ল্যাপটপে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ডিনার এর সময় ডিনার করে নিয়ে ঘুমোতে চলে যায়। রাই রাহুল এর থেকে জানতে পারে রিধিশ আজ বেরোইনী আর বাড়িতেও এতটা চুপচাপ দেখে ওর দাদাভাই কে। রাই এর পেছনেও লাগছে না অন্য দিনের মতো এই বিষয় টা ওর ভালো লাগে না। তাই ডিনার সেরে এসে নূপুরকে কল দিয়ে বলে "দিদিভাই ওদিকে সব ঠিক আছে তো"? নূপুর সব ঠিক আছে জানলে রাই বলে ওর দাদাভাই স্বাভাবিক হয়ে গেছিলো কিন্তু আজ আবার ওর দাদাকে দেখে কেমন লাগছে। নূপুর রাই কে আশ্বস্ত করে বলে "এরকম কিছুদিন থাকতে দাও তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার ওপর ভরসা রাখো"। রাই নূপুরকে বিশ্বাস করে তাই ওর কথায় কিছুটা নিশ্চিত হয়।
পরেরদিন নির্ঝর নূপুরের সাথে অফিসে আসে। নূপুর সবার সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দেই। তখনই রিধিশ জানতে পারে নির্ঝর এর বাবাও একজন বড়ো ব্যাবসায়ী। দেশে বিদেশে ভালই নাম ডাক ওনাদের। তবে যতদিন এখানে আছে নূপুরের সাথে অফিসে আসবে। নূপুর নির্ঝরকে নিয়ে কেবিনে চলে গেলে সবাই নিজের কাজে মন দেই কিন্তু হিয়া কুদৃষ্টিতে নির্ঝরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। রাজ আর রিধিশ হিয়ার কর্মকাণ্ড দেখে একে অপরের দিকে তাকাই যার অর্থ নির্ঝর ও ওর দৃষ্টি থেকে রেহাই পেল না।
"উফ এত হ্যান্ডসাম, হট কেনো উনি; আর নামটাও কত সুন্দর নির্ঝর স্যার। ধুর আমি কেনো স্যার বলবো উনি তো আমার নির্ঝর। আর বেশ বড়োলোক ও আছে, ওনাকে যদি একবার নিজের বসে করে নিতে পারি তো কেল্লাফতে" হিয়ার এমন ভাবনার মাঝেই রাজ ওর কাছে গিয়ে বলে "এত বেশি ভেবোনা ইচ্ছে গুলো পূরণ হবার নই"। হিয়া রাজকে ধমক দিয়ে বলে "কই কি ভেবেছি আমি তুমি যাও তো নিজের কাজ করো"। রাজ মুচকি হেসে নিজের জায়গায় চলে যায়।
~শ্রাবণী
( আমাদের সমাজে হিয়ার মত মানসিকতা সম্পন্ন নারী যেমন আছে নূপুরের মত নারী ও আছে। তাই একটা হিয়ার কারণে পাঁচটা নূপুরের সততার দিকে যেনো আঙুল না ওঠে।)